Ancient Indian culture প্রাচীন যুগ (খ্রীঃ দশম—দ্বাদশ শতাব্দী)

প্রাচীন যুগ
(খ্রীঃ দশম—দ্বাদশ শতাব্দী)

দেশ-কাল-পাত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ইতিহাস, সাহিত্যের ইতিহাসও তারই অন্তর্ভুক্ত। নদীর মতো ইতিহাসের গতি কখনো পথ ধরে চলে, কখনও বা ভুজঙ্গগতি। সাহিত্যের ইতিহাসের চরিত্রও সেই ধারা অবলম্বন করে বিবর্তিত হয়। সে কথা স্পষ্ট হবে সহস্রবর্ষব্যাপী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে।

                                        পূর্ব-ভারতের একটি বিশিষ্ট ঐতিহ্যমণ্ডিত ভৌগোলিক সংস্থানের মধ্যে এক-ভাষাভাষী সংহত নৃগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় সহস্রাধিক বৎসর ধরে যে জীবনাদর্শ, আধিমানসিক স্বরূপ ও শিল্পসমুৎকর্ষ বিকাশলাভ করেছে তার শ্রেষ্ঠ প্রতীকের নাম বাংলা সাহিত্য। আর্দ্রভূমির দেশ বাংলা; স্থল, জল আর বায়ুপ্রবাহ এ-দেশের স্থাবর সংস্কৃতির প্রতি অকৃপণ দাক্ষিণ্যদানে কিছু বিরূপ। অবিশ্বাস্য অল্প সময়ের মধ্যে মঠ-মন্দির কালের কবলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, রাজপ্রাসাদ ও পর্ণকুটিরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না শতাব্দীকালের ব্যবধানে। মূর্তি, চিত্র, পুঁথি—সব কিছুই অচিরকালের মধ্যে কীটের ভোজ্যে পরিণত হয়। ফলে বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্প-গৌরব প্রত্নতত্ত্বের গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে, বাস্তবে তার মূর্তি চক্ষুষ্মানের কাছে নিষ্প্রভপ্রায়। কিন্তু মহাকালের রক্তচক্ষু অবহেলা করে এবং বর্ষাবাদল কীটপতঙ্গের গ্রাস এড়িয়ে যে বিপুল পুঁথিসম্ভার এতাবৎকাল রক্ষা পেয়েছে, তার মধ্যেই প্রাচীনকালের বাঙালির যথার্থ মনঃপ্রকৃতি, শিল্পচেতনা ও আত্মপরিচয় ধরা পড়েছে। এ-জাতির প্রাচীন ও মধ্যযুগের আন্তর-স্বরূপ যে বিস্মরণীর যবনিকার তলে চিরমূকত্ব লাভ করেনি, তার একমাত্র কারণ বাংলার পুঁথি-আশ্রয়ী মধ্যযুগীয় আমাদের প্রাচীন শিল্পের গৌরব আজ ধ্বংসস্তূপে সমাধি লাভ করেছে, শৌর্যবীর্যের প্রমাণও ইতিহাসের বিবর্ণ পৃষ্ঠায় নথিভুক্ত হয়ে আছে। আমাদের সেনা সজ্জিত-চতুরঙ্গে রঘুর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল কি না তা মহাকবি কালিদাসই ('রঘুবংশম্') বলতে পারেন। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের মধ্যে—তা সে প্রাচীন, আধুনিক—যে কালেরই সাহিত্য হোক-না-কেন, বাঙালির সমগ্র চেতনা-প্রবাহ তার মধ্যে ধরা পড়েছে, একথা অস্বীকার করা যায় না। বর্তমান প্রসঙ্গে আমরা বাঙালি-জীবনের সেই আশ্চর্য স্বরূপ অর্থাৎ বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত আলোচনা করব।
মৃত্তিকার ওপরে দেহের প্রতিষ্ঠা, দেহের ওপর মনের প্রতিষ্ঠা, আর সাহিত্য হল সেই মনের বাঙ্ময় প্রকাশ। সুতরাং সাহিত্যালোচনার পূর্বে দেশের পরিচয়গ্রহণ প্রয়োজন। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের রেখাচিত্র অঙ্কনের পূর্বে তার পটভূমি বিশ্লেষণের জন্য তদানীন্তন ইতিবৃত্ত ও জনজীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নেওয়া যাক।

১. প্রাচীন বাংলা ও বাঙালি

আর্য পিতৃগণের প্রাচীন গ্রন্থে পূর্বজনপদবাসী গৌড়-বঙ্গ-সুহ্ম সমতটের (প্রাচীন পূর্ব-ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল) সম্পর্কে সশ্রদ্ধ উল্লেখ নেই। একদা ব্রহ্মাবর্তের মহর্ষিকুল অঙ্গ-বঙ্গবাসী আর্যেতর নরগোষ্ঠীর প্রতি অতিশয় ঘৃণ্য ধারণা পোষণ করতেন, এই “দেশোহনার্যনিবাসঃ” –এটি হচ্ছে অনার্যদের দেশ, এর প্রতি আর্য ভূদেবদের শ্রদ্ধা থাকে কি করে? তাই এ-দেশে এলে আর্যদের জাতি যেত, দুঃসাহসিক আর্য যুবকেরা এ-দেশে যাতায়াত করলে তাদের ভালে 'ব্রাত্য' কলঙ্কতিলক (অর্থাৎ একঘরে) এঁকে দেওয়া হত। তারপরে নানা প্রায়শ্চিত্তমূলক যাগযজ্ঞাদি ('ব্রাত্যস্তোম') করবার পর তারা আবার আমিণ্ডলে স্থান পেত। সে যাই হোক, কালক্রমে এ-দেশের প্রতি উত্তরাপথের আর্যদের উন্নাসিক 'আর্যামি'র অনুকম্পা হ্রাস পেল, পাণিনি পতঞ্জলির গ্রন্থে, মন্থাদি ধর্মশাস্ত্রে, রামায়ণ-মহাভারত এবং বৌদ্ধ-জৈনগ্রহে গৌড়-বঙ্গ শ্রদ্ধার আসন লাভ করল। মূলত উত্তরাপথের আর্যসংস্কার, সংস্কৃত ভাষা ও স্মৃতি-সংহিতার বিধানই অস্ট্রিকগোষ্ঠীভুক্ত (অর্থাৎ শাস্ত্রে যাদের নিষাদ বলা হয়েছে) ও আর্যমহিমাবঞ্চিত বাঙালিকে ব্রাহ্মণ্য সভায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান যুগে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমা বারবার পরিবর্তিত হলেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সীমাস্বরূপ এই বিশাল ভূখণ্ডটি এইভাবে নির্ধারিত হতে পারে : উত্তরে হিমালয় এবং হিমালয় হইতে নেপাল, সিকিম ও ভোটানরাজ্য। উত্তর-পূর্বদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ উপত্যকা ; উত্তর-পশ্চিম দিকে দ্বারবঙ্গ পর্যন্ত ভাগীরথীর উত্তর সমান্তরালবর্তী সমভূমি, পূর্বদিকে গারো-খাসিয়া-জৈন্তিয়া-ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম শৈলশ্রেণী বাহিয়া দক্ষিণ সমুদ্র পর্যন্ত, পশ্চিমে রাজমহল সাঁওতাল পরগণা-ছোটনাগপুর-মানভূম-ধলভূম-কেওঞ্জর-ময়ূরভঞ্জের শৈলময় অরণ্যময় মালভূমি: দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।”১ এই সীমার মধ্যে বাংলা ভাষার বিকাশ, বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য “এই ভূখণ্ডই ঐতিহাসিক কালের বাঙালীর কর্মকৃতির উৎস এবং ধর্ম-কর্ম-নর্মভূমি।

একদা এ-দেশ গৌড়ভূমি বলে পরিচিত হয়েছিল, পরে মুসলমান যুগ থেকে এ-দেশের একাংশ বঙ্গের (পূর্ববঙ্গ) নামানুসারে গোটা ভূখণ্ডটাই 'বঙ্গ', 'বাঙ্গালা', 'বঙ্গাল' প্রভৃতি নামে চিহ্নিত হল, পাশ্চাত্য বণিকেরাও এই বাংলাদেশকে ভূগোলে স্বীকার করে নিল। রাঢ়-বরেন্দ্র বঙ্গ—সবই আজ বঙ্গ-বাংলা নামের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে।

এই বিরাট ভূখণ্ডের ইতিবৃত্ত, বিশেষত রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত, উত্তরাপথের রাজ্যপ্রণালী ও রাজন্যবৃত্তের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। মৌর্য ও কুষাণ যুগে উত্তরাপথের রাজনৈতিক ইতিহাস বাংলাদেশকেও কিছু স্পর্শ করেছিল বটে, কিন্তু এ-দেশ যথার্থ ইতিহাসের পটে স্থান পেল গুপ্ত শাসনকালে খ্রীস্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে। গুপ্ত শাসনে এসে প্রায় দু' শতকের (৫ম ৬ষ্ঠ শতাব্দী) মধ্যে ব্রাহ্মণ্য স্মৃতি-সংহিতা, পুরাণ, কাব্য মহাকাব্যের প্রভাবে বাংলার আর্য সংস্কার বিশেষ দৃঢ়মূল হয়েছিল। হন আক্রমণে গুপ্তসাম্রাজ্যের বনিয়াদ ভেঙে পড়লে কিছুকালের জন্য কর্ণসুবর্ণের (আধুনিক মুর্শিদাবাদ জেলার রাঙামাটি গ্রাম) রাজা শশাঙ্ক-নরেন্দ্র গুপ্ত (৭ম শতাব্দী) বাংলাকে ঐতিহাসিক গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বাংলায় কেন্দ্রীয় রাজশক্তির অবসানে চারিদিকে যে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা শুরু হল রাজনৈতিক ইতিহাসে তাকে 'মাৎস্যন্যায়' বলে। জলাশয়ে বড়ো বড়ো মাছেরা ছোটো ছোটো মাছগুলিকে উদরসাৎ করে। সমাজেও যখন 'জোর যার মুলুক তার' নীতির আবির্ভাব হয়, তখন তাকেই বলে 'মাৎস্যন্যায়'। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর প্রায় শ' খানেক বছর ধরে এ-দেশে বিশৃঙ্খল অরাজকতা দোর্দণ্ডপ্রতাপে রাজত্ব করেছিল। তারপর অত্যাচারিত জনসাধারণ ও বিব্রত রাজপুরুষেরা এই



বিশৃঙ্খলা দূর করবার জন্য সমবেত হয়ে গোপালদেব নামে এক সেনাপতিকে বাংলার রাজসিংহাসনে রাজারূপে অভিষিক্ত করলেন—যদিও গোপালদেব কোনো রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেননি। খ্রীঃ অষ্টম শতাব্দীতে রাজা গোপালদেব ‘প্রকৃতি’দের (অর্থাৎ প্রজা) দ্বারা রাজা নির্বাচিত হয়েছিলেন, এ সংবাদ বিস্ময়কর বটে। অষ্টম শতাব্দী থেকে ১১৬০ খ্রীঃ অব্দ—– তিন শত বৎসরেরও বেশি পালবংশ গৌড়ের সিংহাসনে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। কালক্রমে দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে পারিবারিক কলহে পালবংশ দুর্বল হয়ে পড়লে সামস্তের দল মাথা তুলে দাঁড়াল, পালরাজাদের ভিন্-প্রদেশাগত সৈন্যবাহিনীও সামন্তদের দলে যোগ দিল—ফলে বাংলায় আবার এক রাষ্ট্রসংকট ঘনাল। এই বিশৃঙ্খলার সুযোগে যাঁরা বাংলার সিংহাসন অধিকার করলেন, তাঁরা সুদূর কর্ণাটের অধিবাসী ব্রাহ্মণ সেনবংশ, বৃত্তিতে তাঁরা ছিলেন ক্ষত্রিয়। তাই তাঁদের 'ব্রহ্মক্ষত্রিয়' বলা হয়।

সেনবংশের আদিপুরুষ সামন্তসেন কর্ণাট ত্যাগ করে রাঢ়দেশে গঙ্গাতীরে বাস করেছিলেন। তাঁর পৌত্র বিজয়সেন গৌড়রাজ্যের রাজারূপে প্রতিষ্ঠিত হন এবং অল্পকালের মধ্যেই পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গে নিজ আধিপত্য বিস্তার করেন। তাঁর পুত্র বল্লালসেন (১১৫৮ খ্রীঃ অব্দে সিংহাসন লাভ) এবং তাঁর পুত্র লক্ষ্মণসেন (১১৭৮ খ্রীঃ অব্দে সিংহাসনে অভিষিক্ত ) বাংলাদেশে সেনবংশের অধিকার দৃঢ়তর করেন। পালরাজারা ধর্মমতে মহাযানী বৌদ্ধ হলেও হিন্দুধর্মের প্রতি তাঁদের অশ্রদ্ধা ছিল না। বস্তুত তাঁদের সুদীর্ঘ-কালব্যাপী শাসনকালে গৌড়বঙ্গের সমাজ সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ হয়েছিল। কিন্তু ব্রাহ্মণ্যমতে ঘোরতর-আস্থাযুক্ত বিদেশি সেনবংশের রাজসভাতে উচ্চ সমাজের, বিশেষত ব্রাহ্মণ সমাজের আনাগোনা বৃদ্ধি পেলেও, জনসাধারণের সঙ্গে এই শাসনের যোগাযোগ স্বাভাবিক কারণেই শিথিল হয়ে পড়েছিল। সেনরাজগণ সংস্কৃত সাহিত্য, বৈদিক যাগযজ্ঞ ও স্মৃতি-সংহিতার বিধিনিষেধের দ্বারা বৌদ্ধ বাঙালিকে ব্রাহ্মণ্য মতাশ্রয়ী করার চেষ্টা করলেও তার সার্থকতা ঘটবার আগেই তুর্কি জাতির অধিনায়ক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ইতিকার উদ্দিন-বিন-বখতিয়ার খিলজি মুষ্টিমেয় অনুচরদের সঙ্গে নিয়ে ছদ্মবেশ ও চাতুরীর দ্বারা লক্ষণসেনের রাজধানী নবদ্বীপ আক্রমণ করেন। অতর্কিত আক্রমণে বিভ্রান্ত, অরক্ষিত পুরীর অধিনায়ক বৃদ্ধ লক্ষ্মণসেন সপরিবার পূর্ববঙ্গের নিরাপদ অঞ্চলে পলায়ন করেন (১১৯৯ বা ১২০২ খ্রীঃ অঃ)। এর অল্পকালের মধ্যেই গৌড়ভূমিতে ইসলাম ধর্ম এবং তুর্কি শাসনের চণ্ডপ্রভাব বিস্তারলাভ করে। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে নেওয়া যেতে পারে। ভীরুতার জন্য রাজা লক্ষ্মণসেন ঘরে-পরে, স্বদেশি ও বিদেশি ঐতিহাসিকের কাছে নিন্দিত হয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, লক্ষ্মণসেন কোনোকালেই ভীরু-কাপুরুষ ছিলেন না, যৌবনে তিনি বিখ্যাত যোদ্ধা বলে সর্বত্র পরিচিত হয়েছিলেন। বিজয়োদ্ধত মুসলমান লেখকও (মিনহাজ উদ্দিন) লক্ষ্মণসেনকে নিন্দা না করে বরং প্রশংসাই করেছেন। সুতরাং মনে হয়, ইতিকার উদ্দিন ঠিক ভোজবাজি দেখিয়ে এ-দেশ জয় করেননি, বড়ো রকমের একটা যুদ্ধবিগ্রহ নিশ্চয় হয়েছিল; কিন্তু বিজয়ী মুসলমানের ইতিহাসে তার কোনো উল্লেখ নেই, সেকালের হিন্দুদের লেখা বাংলাদেশেরও কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস পাওয়া যায় না। এর জন্যই বৃদ্ধ লক্ষ্মণসেনের শিরে নির্বিচারে অপবাদের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে যাই হোক, সেন শাসনকালে বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর ব্রাহ্মণ্য মতাদর্শের পলিমাটি পড়েছিল, তার ফল ভালোই হয়েছিল। সংস্কৃত সাহিত্যের বিশেষ প্রভাব না পড়লে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য কিছুতেই লোক-সাহিত্যের ওপরে উঠতে পারত না, পরবর্তিকালের বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় প্রসারও ঘটত না। সেনবংশের শাসনে এই শুভ লক্ষণটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে স্বীকৃতির যোগ্য।

. ড. নীহাররঞ্জন রায় বাঙ্গালীর ইতিহাস (আদি পর্ব)।

Shaharuk Islam

Hi I am Shaharuk Islam. I enjoyed in writing articles and spread knowledge cross over the internet.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال